ইন্টারনেটের সুফল ও কুফল

Modern Communication Technology এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তথ্যপ্রযুক্তি(IT sector). এই সেক্টরের যতগুলো ইনভেনশন কন্ট্রিবিউট করেছে তার মধ্যে সবচেয়ে মর্ডান এবং পরিচিত হচ্ছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট শব্দটি এসেছে মূলত Inter Connected Network থেকে। আমরা সবাই জানি যে, বর্তমান বিশ্বায়ন তথা গ্লোবালাইজেশন ক্ষেত্রে কেবল একটা মানুষ তার পাড়া-মহল্লা কিংবা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না বরং বিশ্বের বিভিন্ন মানুষের সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় এবং তার ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূরণের লক্ষ্যে জন্য ইন্টারনেট এর কোন বিকল্প নেই। পুরো পৃথিবীটাই যেন একটা গ্রামের মত, ইন্টারনেট নামক জালে আবদ্ধ। যদিও বর্তমানে পৃথিবীর এমন কিছু অঞ্চল আছে যেখানে ইন্টারনেট সেবা পুরোপুরি পৌঁছায়নি, তবুও বলা যায় ইন্টারনেটের ব্যবহার হয় না এমন চিত্র খুবই বিরল। 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে কিনা করা যায়, ফেইসবুকিং, ইউটিউবিং, ওয়েব ব্রাউজিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, ব্লগিং এবং ইত্যাদি আরো কত কি! বলেও হয়তো শেষ করা যাবে না।

এগুলো একদিকে যেমন আমাদের জীবনকে করেছে সহজসাধ্য অনবদ্য, তেমনি ক্ষয় করেছে আমাদের মূল্যবান সময়কে এবং নানাভাবে ধ্বংস করছে মানুষকে বিশেষ করে উঠতি তরুণ প্রজন্মকে ! 

এটা যেন প্রকৃতিগতভাবে একটা স্বভাব যে, কোন একটা ইনভেনশনের পিছনে যে মেধাশ্রম এবং কায়িকশ্রম খাটানো হয় সেটার ফলাফল নির্ভর করে সাফল্যের সঙ্গে ওই ইনভেনশন এর মানবকল্যাণে ব্যবহারের উপর। অর্থাৎ যতক্ষণ পর্যন্ত এই তথ্য প্রযুক্তি আমাদের জীবনকে সহজতর করতে কিংবা আমাদের সময় লাঘব করতে এবং সমস্যার সমাধানে ব্যবহার হবে ততক্ষণ পর্যন্ত এটা কার্যকরী এবং আমাদের জন্য ভীষণ উপকারী। কিন্তু যখন এটার অপব্যবহার হয় তখন এটা আমাদের জীবনের উপকারের চেয়ে বরং ক্ষতিসাধন করে বেশি। 

একটা উদাহরণ দিলে বিষয়টা বুঝতে আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। যেমন ধরুনঃ অতীতে আমাদের নিকট মোবাইল বর্তমানের মতো এতটা সহজলভ্য ছিলনা। তখন মানুষ অফিসিয়াল কাজ কিংবা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ব্যতীত মোবাইল ব্যবহার করত না। কালক্রমে বিজ্ঞানের আধুনিকায়ন এবং প্রযুক্তিবিদদের নিরলস পরিশ্রমের ফলে সেটা আধুনিকায়ন হয়েই যাচ্ছে এবং সেটাও চলমান। একটা সময় শুধু ফোন করা যেত এবং সেটা রিসিভ করা যেত কিন্তু বর্তমানে সেটা দিয়ে ছবি তোলা, ভিডিও করা, গেমস খেলা থেকে শুরু করে ইন্টারনেট ব্রাউজিং সহ নানান কাজ করা যায়। 

শুরুর দিকে এটার ব্যবহার ছিল আমাদের ব্যক্তিগত ইচ্ছা আকাঙ্ক্ষা পূরণ কিংবা কাজে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে। বর্তমানে এটা যেন অনেক ক্ষেত্রেই বিলাসিতা এবং অপ্রয়োজনীয় বটে। তৎকালীন মানুষ এটা সৌখিন কাজে ব্যবহার করত, তখন সেটা মানুষের কাছে অনেকটা অবাক করার মত ছিল। বর্তমানে এর ব্যবহার এবং অপব্যবহার দুটিই হচ্ছে, ক্ষেত্রবিশেষে ক্ষতি বা অপব্যবহার অনেক। 
এটা কেন? কি এর কারণ ? 

 অপব্যবহার !!! 

মানুষ আগে পিতা-মাতা,ভাই-বোন,বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেওয়া কিংবা জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করলেও বর্তমানে তা ব্যবহার বেড়েছে নিজেদের নিম্ন মানসিকতার অতল গর্ভের তলানির মাধ্যম হিসেবে, এটা যেন হয়ে উঠেছে একটা সস্তা বিনোদনের ন্যায়। ভালোর চেয়ে মন্দ অশ্লীলতার ছড়াছড়িই বেশি ! 

অনেকে ইউটিউবে গিয়ে সারাদিন শুধু ভিডিও দেখেই সময় নষ্ট করে কিন্তু প্রডাক্টিভ কিছু করে না। এক্ষেত্রে তেমন কোনো লাভ হয় না, উল্টা আরো সময়ের অপচয়। 

কেউ আবার অনলাইনে সাইবার বুলিং এর শিকার হয়, কেউ স্বীকার হয় অনলাইন প্রতারকদের মাধ্যমে প্রডাক্ট সেলিং এর ক্ষেত্রে। কেউ আবার মাদকাসক্ত কিংবা সন্ত্রাসবাদের সাথে জড়িয়ে পড়ে এই অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম থেকেই।  

কেউ আবার ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে শান্তশিষ্ট সুস্থ সরল মনকে নিষ্পেষিত করে তা ক্রমবর্ধমানভাবে ঝালাই করতে থাকে। অবশ্য এতে তার কোন লাভ হয় না। কারণ এই অনলাইনে ধর্মীয় যে ব্যাখ্যা দেয়া হয় তার সাথে মূল ধর্মের তেমন কোনো সম্পর্ক থাকে না। অনেকক্ষেত্রেই সেটা ব্যক্তিগত মার্কেটিং কিংবা জনসমর্থন আদায়ের জন্য করে থাকে। 

অনেক সুস্থমনের শিশু-কিশোর অনলাইনে আসার পর থেকে বিভিন্ন দৃশ্য কিংবা লেখার সম্মুখীন হয়, যেটা অনেক ক্ষেত্রেই তার উপযোগী নয়। এটা তার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। এটার সাথে খাপ খাওয়াতে না পেরে একটা পর্যায়ে এসে সে sadness কিংবা frustration-এ ভুগে।

কোন কোন ক্ষেত্রে তো এটার দ্বারা influenced হয়ে কেউ অনেক খারাপ এবং জঘন্য পথে পা বাড়ায়। যেমনঃ ফেসবুক চ্যাটিং এর সময় অনেকক্ষেত্রে প্রেমের ঘটনা ঘটে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে সেটা ফেক আইডির সাথেও। পরবর্তীতে বাস্তবতার সামনে আসলে যখন এগুলোর আর গ্রহণযোগ্যতার থাকেনা তখন ঘটে বিপদ। তখন এরা থাকে ডিপ্রেশনে! 

তাছাড়াও হত্যাকাণ্ড, এক্সিডেন্ট, অগ্নিকাণ্ড, পর্নোগ্রাফি, যুদ্ধবিগ্রহের দৃশ্য শিশুর মনকে নানাভাবে প্রভাবিত করে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে যেটা অবশ্য পরবর্তী জীবনে তাকে বহন করতে হয়। এতে করে তার সুস্থ সরল মন বিনষ্ট হয়ে সেটা খারাপ চিন্তা ভাবনা এবং ডিসিশন এর দ্বারা replaced হয়ে যায়। এতে করে সে যেমন শারীরিক এবং মানসিকভাবে ব্যক্তিগতভাবে ক্ষতির সম্মুখীন হয়, তারচেয়েও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় পরবর্তী জীবনের জন্য গেঁথে রাখা স্বপ্নপূরণ করতে না পারার সময়। কেউ কেউ তো ভুল সিদ্ধান্তের কবলে পড়ে নিজেকেই অঙ্গহানি করা, কষ্ট দেয়া থেকে শুরু করে সুইসাইডও করে বসে। 

এতে করে তার পরিবার-পরিজন যেমন তাদের একজন সদস্য হারায় তেমনি সমাজ স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যায়, এটা থেকে সম্পূর্ণরূপে পরিত্রান পাওয়া দুষ্কর। তবে চেষ্টাএবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এটা নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।  

অনেক সময় হ্যাকারদের কবলে পড়ে হারাতে হয় আইডি পাসওয়ার্ড সহ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, ক্রেডিট' কিংবা ডেবিট কার্ড। এতে অনেক ভোগান্তি এবং সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। 

দীর্ঘক্ষন স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকার কারণে চোখের সমস্যা হয়, শক্তি কমে যায়[অনেকের তো চশমাও নেয়া লাগে]
তাছাড়াও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ওয়েভ কিংবা রেডিয়েশন এর ফলে আমাদের মস্তিষ্কে যে ডোপামিন খরচ হয় (একজন নেশাগ্রস্ত কিংবা মাদকাসক্ত ব্যক্তির ন্যায়) সেটার প্রভাব পরবর্তীতে আমাদের প্রডাক্টিভ কাজ করার সময় বর্তায়। এতে করে আমাদের শারীরিক মানসিক ক্ষতি সাধন হওয়ার পাশাপাশি ব্যক্তিগত, সামাজিক, অর্থনৈতিক জীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়।


 তাই বলে ইন্টারনেটের সুবিধা কিংবা উপকারিতা একে অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। ইন্টারনেট তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।

মানুষ একসময় কবুতরের মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ করত, অতঃপর ডাক যোগাযোগ মাধ্যমে চিঠি প্রেরণ করত। গ্রাফ আবিষ্কারের পর তারের মাধ্যমে সংকেত পাঠাতো। টেলিফোন আবিষ্কারের পর সরাসরি কথা বলতে পারতো(আর এর মাধ্যমে)। 
মোবাইল আবিষ্কারের পর তারবিহীন ভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছে। আধুনিকায়নের ফলে মোবাইলে যেমন কথা বলা সহ আরো অনেক সুযোগ-অনায়াসে পেয়ে যাচ্ছে ঠিক একইভাবে সুবিধাআন্তর্জাতিকভাবে যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক অনন্য ভূমিকা রেখেছে ইন্টারনেট। 

ইন্টারনেটের মাধ্যমে খুব সহজেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে যোগাযোগ করা সম্ভব। দেশে থেকে বিদেশি ক্লায়েন্টের সাথে যোগাযোগ করা যায়। যেটা ফ্রিল্যান্সিং এর ক্ষেত্রে এটা বেশ ভূমিকা রাখে।

এছাড়াও অনলাইনে স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়, অনলাইনে বিদেশি দক্ষ ইনস্ট্রাক্টর এর আন্ডারে বিভিন্ন কোর্স করা যায়। স্কিল ডেভলপমেন্ট এর সেটা বেশ সহায়কও বটে। 

একই সাথে বিদেশে থাকা বন্ধু-বান্ধব কিংবা আত্মীয়স্বজন এবং চেনা অচেনা মানুষের সাথে যোগাযোগ করা যায়। 

দেশ বিদেশের খবর মুহুর্তের মাধ্যমেই জানা যায়। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধও জনসমর্থন আদায় এবং মানবতার সেবা সহজ জনসচেতনতা গড়ে তোলা যায়।

ইন্টারনেটের মাধ্যমে দেশে থেকেই বিদেশি ইউনিভার্সিটির কোন প্রফেসরের লেকচার এটেন্ড করা যায়। 

দেশী বিদেশী বই পুস্তক অনলাইনেই পিডিএফ কিংবা এইচটিএমএল/epub ফরমেটে পড়া যায়। অনলাইনে ভিডিও দেখা গেমস খেলা থেকে শুরু করে আরো অনেক কাজ করা যায়। 

ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং ব্যাংকিং সেক্টরে ইন্টারনেটের ব্যবহার হয়ে থাকে। তাছাড়া অফিস-আদালত এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে ও ইন্টারনেটের ব্যবহার রয়েছে।


অর্থাৎ, বর্তমান বিশ্বায়নের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সময়ের আবর্তনে ইন্টারনেট এক গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে কাজ করে;যেটা এড়ানো অনেক ক্ষেত্রেই অসম্ভব। যদিও এর অনেক নেতিবাচক দিক রয়েছে তবুও ব্যক্তিগত, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় কিংবা অর্থনীতি জীবনের সমস্যার সমাধানের লক্ষ্যে ইন্টারনেটের শঙ্খ ইতিবাচক দিক রয়েছে। আমরা নেতিবাচক দিক তাকে চিহ্নিত করে সেটা এড়িয়ে ইতিবাচক দিকটা গ্রহণ করব। ইন্টারনেটের  ব্যবহারের পাশাপাশি যাতে মানবকল্যাণ, দেশও জাতির কল্যাণ সাধন হয় এবং কোনভাবে যেন নিজের ব্যক্তিজীবনে ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয় সেটা মাথায় রাখবো।
আমাদের ভালোমন্দ সবকিছুই নির্ভর করে আমাদের ব্যবহার বা অপব্যবহারের ওপর তাই সিদ্ধান্ত আমাদেরই নিতে হবে। 

মোঃ শিহাবুজ্জামান আশিক
ঢাকা
০১/০৮/২১

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.